চীনের এখন দরকার একটা শক্তিশালী মুদ্রা। বাইরের নানা ষড়যন্ত্র, বিশেষ করে আমেরিকার তরফ থেকে, কোন কিছুই চীনকে তার লক্ষ্যে পৌঁছানো থেকে আটকাতে পারবে না। CNBC-র বিশ্লেষকদের মতে, চীনা কর্তৃপক্ষ বাণিজ্য যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ইউয়ানের দুর্বলতাকে ব্যবহার করবে এমন সম্ভাবনা খুবই কম। এর কারণ আর কিছু নয়—আর্থিক বাজারে অস্থিরতা নিয়ে দুশ্চিন্তা।
এই সপ্তাহে অফশোর মুদ্রাখ্যাত ইউয়ান দুর্বল হয়ে রেকর্ড সর্বনিম্ন প্রতি ডলারে ৭.৪২৮৭ ইউয়ান পৌঁছে গেছে। তার আগে, চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক (PBoC) ২০২৩ সালের পর এই প্রথমবারের মতো ইউয়ানের বিনিময় হার এতটা নিচে নির্ধারণ করেছিল। সাম্প্রতিক সময়ে ইউয়ানের দরপতন হয়ে ৭.৩৫০৯-এ পৌঁছেছে, যা ২০০৭ সালের পর সর্বনিম্ন।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়ে গেছে—বেইজিং হয়তো ইচ্ছাকৃতভাবে ইউয়ানকে আরও দুর্বল হতে দিচ্ছে, যাতে ট্রাম্পের শুল্কের ধাক্কা কিছুটা সামলানো যায়। তবে বিশ্লেষকদের মতে, এই ধরনের কৌশল বাস্তবে খুব একটা সম্ভাবনাময় নয়। তারা সতর্ক করেছেন যে ইউয়ান বেশি দুর্বল হয়ে গেলে এর ফলাফল হিসেবে মূলধনের বহিঃপ্রবাহ হতে পারে—যেটা চীনা নীতিনির্ধারকরা কিছুতেই হতে দিতে চাইবেন না।
CNBC-র বিশেষজ্ঞদের মতে, ইউয়ানের বড় ধরনের অবমূল্যায়ন দীর্ঘমেয়াদে খুব একটা বাস্তবসম্মত নয়। এর বদলে অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক (PBoC) নিয়ন্ত্রিতভাবে ধাপে ধাপে ইউয়ান অবমূল্যায়নের পথে এগোবে। HSBC-এর এশীয় কারেন্সি গবেষণা বিভাগের প্রধান জোয়ি চিউ বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের প্রতিক্রিয়ায় ইউয়ানের অবমূল্যায়ন চীনের কৌশলের অংশ নয়।” তিনি আরও যোগ করেন, “অত্যন্ত দ্রুত অবমূল্যায়ন হলে ভোক্তাদের আত্মবিশ্বাস কমে যাবে এবং মূলধন বহিঃপ্রবাহ আশঙ্কা বেড়ে যাবে।”
ইউরেশিয়া গ্রুপের চীন বিষয়ক ডিরেক্টর ড্যান ওয়াং বলেন, “এই বাণিজ্য যুদ্ধের মধ্যে জাতীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন এখন চীনের জন্য কার্যকর অস্ত্র নয়।” তাঁর মতে, এই কৌশল ধরে রাখলে অর্থনৈতিক সংকট ঘনিয়ে আসবে।
মজার বিষয় হলো, ইউয়ানের আগের অবমূল্যায়নের সময় ব্যাপকভাবে দেশটি থেকে মূলধনের বহিঃপ্রবাহ ঘটেছিল, যার ফলে চীন প্রায় ৭০০ বিলিয়ন ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ হারিয়েছিল। সেই অভিজ্ঞতা চীনা সরকার আবার পেতে চায় না—এটা মোটামুটি নিশ্চিত।
বর্তমানে, চীনের অর্থনীতি একপ্রকার চাপের মুখে রয়েছে, কারণ যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ শুল্ক চীনা রপ্তানিকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে। এর সঙ্গে যদি মূলধনের দ্রুত বহিঃপ্রবাহও যুক্ত হয়, তাহলে আর্থিক স্থিতিশীলতা একেবারেই ভেঙে পড়তে পারে। এখন বেইজিংয়ের প্রধান লক্ষ্য হলো—মূলধনের বহিঃপ্রবাহ আটকানো। ওয়াং জোর দিয়ে বলেন, “চীনা সরকার বিনিয়োগকারীদের বোঝাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে যে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ইউয়ানকে রক্ষা করার মতো সক্ষমতা তাদের রয়েছে।”
চীনের নীতিনির্ধারকদের কাছে আর্থিক স্থিতিশীলতা এখন শীর্ষ অগ্রাধিকার। সেই লক্ষ্যে ইউয়ানকে টিকিয়ে রাখতে এবং দুর্বলতা ঠেকাতে যা যা দরকার, সবই করতে প্রস্তুত তারা।
*The market analysis posted here is meant to increase your awareness, but not to give instructions to make a trade.